বহুতলভবনের বিলাসবহুল অফিস রুমের প্রকাণ্ড জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ফারুক আহসান ! বাইরে কিছু দেখছেন না! হাতের গরম কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের শীতল জানালার কাঁচকে ঘোলাটে করে রেখেছে! সেটার দিকেই আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছেন!
বাসর রাতে তাঁর স্ত্রী সলজ্জ মুখে দুধের শরবতের গ্লাস নিয়ে ঢুকেছিলেন! দুধ দেখলে এমনিতেই ফারুক সাহেবের বমি আসে ! তার উপর সবুজ পেস্তা বাদাম ভাসছে! শরবত থেকে ভুরভুর করে গোলাপ-জলের নাক জ্বালানি গন্ধ আসছে! এসব আনতে কে বলেছে ? আর এত বড় ঘোমটা দিয়ে রেখেছ কেন !? “তার স্ত্রী সাবধানে সাইড টেবিলে গ্লাস নামিয়ে রেখে গ্লাসের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন ! এসি রুমে গ্লাস নিয়ে ঢোকার সাথে সাথে গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি! আংগুল দিয়ে গ্লাসের গায়ে লিখলেন, এফ !
বাসর রাতে অনাঘ্রাতা তরুনীকে কোনায় কোনায়, কানায় -কানায় আবিষ্কার করার প্রবল আনন্দ ও উত্তেজনা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের তুলনায় কিছুমাত্র কম নয় ! একটি পুরুষের কাছে, নববধূর ব্রীড়া বিধুর শরীরকে স্বামীর অধিকার নিয়ে স্পর্শ করা নীল আর্মস্ট্রং এর চাঁদের মাটি স্পর্শ করার চেয়ে কোন অংশে কম রোমাঞ্চকর নয় !
অথচ, ফারুক সাহেব সেইসব স্মৃতি ভুলে গেছেন ! শুধু এই একটি স্মৃতি ভোলেন নি! চোখ বন্ধ করলেই মনে পরে,শরবতের গ্লাসের গায়ে ফারুকের আদ্যক্ষর ‘এফ’!
যখনই তার বউ ঘোলা কাঁচ দেখতেন সেখানে লাভ চিহ্ন এঁকে তার মাঝে এফ লিখতেন ! ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাবার পরও তার মাঝে অনেক ধরনের ছেলেমানুষি ছিলো ! মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বিত্তশালী পরিবারে সংসার করতে এসে অল্পতেই বিস্মিত হতেন ! সেটা প্রকাশ পেত তার ছেলেমানুষিতে ! ফারুক সাহেব প্রায়শই বিরক্ত হতেন ! আজ যখন ছেলেমানুষি করার মানুষটাই নেই তখন জীবনটা বড্ড পানসে ঠ্যাকে!
“মে আই কাম ইন স্যার” গেয়ো উচ্চারণে তীক্ষ্ণ মেয়েলি কন্ঠে ফারুক সাহেবের ভাবনায় ছেদ পরলো! এই মেয়েটি গত এক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করে ফারুক সাহেবের এপয়েনটমেনট পেয়েছিলো ! রুমে ঢুকে কথা শুরু করার আগেই মন্ত্রনালয় থেকে তলব করায় তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান ফারুক সাহেব! আজ মেয়েটি আবার এসেছে !
মাথা ঝুঁকিয়ে “কাম ইন “ বলাতে আহ্লাদী হাসি নিয়ে মেয়েটি এগিয়ে এলো ! হাঁটার ভংগিতে বোঝা যায় , উঁচু হিল জুতোয় সে মোটেই অভ্যস্ত নয় ! সস্তা মেকাপ মুখে আলগাভাবে লেগে আছে ! গায়ের ব্লাউজটা ঢলঢলে - বোঝাই যাচ্ছে ব্লাউজটা তার নিজের নয় ! কেউ যখন ধার করা ব্লাউজ পরে কোন এপয়েন্টমেন্টে আসে তখন বুঝতে হবে- প্রয়োজনটা অতীব জরুরি!
মেয়েটির অংগভংগিও বলে দিচ্ছে যে কাজে সে এসেছে সেজন্য চড়া মূল্য দিতে সে প্রস্তুত!
এমন না যে ফারুক সাহেব নারীসঙ্গের প্রতি আগ্রহী নন! নিষিদ্ধ প্রেমের আলাদা টান আছে! ততক্ষণই আকর্ষনীয় যতক্ষণ নিষেধ করার , গোয়েন্দাগিরি করার মানুষটি কোমর বেঁধে লেগে আছে ! গোল্লাছুট খেলায় উত্তেজনা থাকে ! কিন্তু এখন গোল্লা এঁকে দেয়ার রেফারি নেই- যখন তখন ছুটে যাওয়া যায় - এখন আর প্রতিপক্ষের চোখে ধূলো দিয়ে বেডাগিরি দেখানোর গৌরব নেই !
ফারুক সাহেব দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন ! মেয়েটিকে শীতল গলায় বললেন, বলুন, কি কাজে এসেছেন ??
(চলবে )