আমরা যে জমানার মানুষ তখন চিঠি লেখার চল প্রায় শেষের দিকে! হ্যালো ,এটা কি 2441139, ☎️📞বেলা বোস তুমি পারছো কি শুনতে ? সেই জমানা চলছে!
তারপরও কলেজে পড়ার সময় রক্ত দিয়ে লেখা একখান চিঠি পেয়েছিলাম ! চিঠি বেশ দীর্ঘ! রক্ত দিয়ে চিঠি সাধারণত অপদার্থ টাইপ প্রেমিকরা লেখে ! চেহারায়, ভাবেসাবে, যোগ্যতায় সুবিধা করতে না পেরে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং করার ছেলেমানুষি চেষ্টা!
বানান ভুলে ভরা সেই রক্তাক্ত চিঠির বক্তব্য আবোলতাবোল।আম্মার কাছে জুতোর বাড়ি খাবার ঝুঁকি সত্ত্বেও আমি সেই চিঠি বেশ কিছুদিন সংরক্ষন করেছিলাম ! বন্ধুমহলে গর্ব করে দেখাতাম! বেশিরভাগ বান্ধবী আবেগী হয়ে যেত, কেউ বা বিস্মিত হতো ! দু তিনজন অবশ্য নাক সিটকে বলতো - ধূর ! মুরগীর রক্ত! প্রতি বিষয়ে হা হা রিএক্ট 😁😜😁দেবার মতো মন মানসিকতা তখনও ছিলো !
এরপরও যে চিঠি পাইনি এমন নয়! প্রেম যখন কলমে ভর করে তখন তার আবেদন অন্যরকম! মুখে প্রেমের সংলাপ বেশিক্ষণ চালাচালি করা কঠিন ! ভালোবাসার সম্মুখসমরে বোবা, তোতলা বা বাচাল যে যে রকমই হোক - কাগজে কলমে সে তুখোড় প্রেমিক!
আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ডাকযোগে পেয়েছিলাম, বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগের চিঠি! চাকরিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, অর্জনটা অমূল্য ছিলো!
আরেকটা জরুরি চিঠিও ডাকযোগে পেয়েছিলাম - তালাকের চিঠি! অবিশ্বাস্য অথচ কী ভীষণ বাস্তব! চিঠির সীলমোহর ঝাপসা হয়ে গেছে- চিরকালের জন্য কপালে যে সীলমোহর লেগেছে সেটা আজও দগদগে! এখনও কোন ইন্টারভিউতে গেলে উপস্থাপক উপহাসের মিচকি মিচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা, আপনার কি ডিভোর্স হয়েছিলো ! উপস্থাপকের দোষ নেই! এজাতীয় “কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেয়া” টাইপ প্রশ্ন করলে ভিউ বেশি হয়- পাবলিক ডিমান্ড!
যাক সে কথা! ভেবেছিলাম, আমার জীবনে এর চেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য চিঠি আসবেনা! এসেছিলো - জেলজীবনে আমার বাপজানের চিঠি!
বিশ্বাস করুন, আমি আব্বার চিঠিগুলো কখনও পড়িনি! মিষ্টি মা- এই সম্বোধনটুকু পড়ার পরই বুকটা ভেঙ্গেচুড়ে উথাল পাথাল কান্না আসতো ! পরিচিত গোটা গোটা হস্তাক্ষর স্পর্শ করতাম! গালে, কপালে চিঠি বুলাতাম! কিন্তু পড়তে পারতাম না! পৃথিবীতে কিছু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দেননি !
আমার বন্দিনী প্রথম খন্ডে বাবার চিঠিগুলো দেয়া আছে ! আমার পাঠকরা হয়তো পড়েছেন!